রাজনীতি

ব্রেকিং: গ্রীন সিগন্যাল দেয়া হলো

সাত বছর পর বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। আজ রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল এবং মাঠ প্রাঙ্গণে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল সভাপতিত্বে প্রায় ৪ হাজার নেতা এতে অংশ নেবেন। দিনব্যাপী এই সভায় সারা দেশ থেকে আসা নেতারা গত ১৭ বছরে তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরবেন। দলীয়প্রধান নেতা-কর্মীদের কথা শোনার পর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারেক রহমান সভায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের চলমান পরিস্থিতি, দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিত্র দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখাসহ নানা বিষয় তুলে ধরবেন। পাশাপশি শতাধিক আসনে দলের প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে।

সভার সার্বিক বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বর্ধিত সভা আয়োজনের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, সবার অংশগ্রহণে যে মিলনমেলা তৈরি হবে তার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে নতুন একটা স্পিরিট তৈরি হবে, নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সব ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করব। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা যে, জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ভিত আরও শক্তিশালী হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবারের বর্ধিত সভায় ভিন্ন মাত্রা থাকবে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা উঠে আসবে। প্রাধান্য পাবে মিত্র দলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বৈষম্যবিরোধীদের দল গঠন ইস্যু। দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে এক সময়ের মিত্র দল বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অন্যদিকে সরকারি সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে নতুন দল ঘোষণার বিষয়টিও সভায় গুরুত্ব পাবে। স্বাভাবিকভাবে বর্ধিত সভায় এই বিষয়গুলো আগে উঠে আসবে।

পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সারা দেশের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। তাঁর বক্তব্যে সারা দেশে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যেমন কঠোর নির্দেশনা থাকবে, তেমনি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে জানাবেন। জানা গেছে, বর্ধিত সভা যেহেতু অনেক বড় ও উন্মুক্ত পরিসরে হবে, তাই নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা না-ও থাকতে পারে। ফলে নির্বাচন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ্য আলোচনায় আসবে না। তবে দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে একটি ধারণা নেতা-কর্মীদের দেওয়া হবে। কোন প্রক্রিয়ায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে সে বিষয়গুলো উঠে আসবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং যারা মনোনয়নের জন্য প্রাথমিক চিঠি পেয়েছিলেন তারাও সভায় উপস্থিত থাকবেন। সেই নির্বাচনে যারা প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন, এবার তাদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হবে। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর দাবি, যারা বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, যারা সত্যিকার অর্থে দুর্নীতিমুক্ত ছিলেন, একই সঙ্গে ৫ আগস্টের পর যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি, যারা এর থেকে বিরত ছিলেন, আইনপ্রণেতা হিসেবে যোগ্য এসব নেতাকে যেন আগামীতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যারা গত ১৭ বছর নেতা-কর্মীদের বিপদে পাশে ছিলেন না, স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন, তাদের যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়, সেই দাবিও তোলা হবে বর্ধিত সভায়।

জানা গেছে, তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উদ্বোধনী বক্তব্য দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মঞ্চে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তারাও থাকবেন। জেলা, থানা ও উপজেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর তিন দিন পরে ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *