রাজনীতি

আয়নাঘর নিয়ে যে স্বীকারোক্তি দিলেন শেখ হাসিনা

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনার একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। যেখানে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বহুল আলোচিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে নানা কথা বলতে শোনা যায়। ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি প্রায় ৫০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৩৬ হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে নানা প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।

ইন্টারনেটে প্রচারিত ওই ভিডিওটির সঙ্গে ক্যাপশনে লিখা হয়েছে, ‘হাসিনার স্বীকারোক্তি- কীভাবে আয়নাঘর তৈরি হলো, কীভাবে নির্যাতন ও ভয়ের মাধ্যমে আয়নাঘরে দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়।’ এছাড়া ফেসবুকে প্রচারিত ওই ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে আলোচিত বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ নির্মাণের পেছনে কার আইডিয়া রয়েছে এ বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি আয়নাঘরের পরিবেশসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়।

ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, আয়নাঘরের বুদ্ধি আমার বেয়াই তারেক সিদ্দিকী দিয়েছেন। ক্রসফায়ারে লোক জানাজানি ও সমালোচনা বেশি হওয়ায় আয়নাঘরের পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা করা হয়। ৩ ফুট বাই ৩ ফুট ঘর বানিয়ে প্রথমে বিরোধী দলীয় নেতা ও সাংবাদিকদের তুলে আনা হয়। এছাড়াও আয়নাঘর নিয়ে ভিডিওটিতে আরও অনেক কথা বলতে শোনা যায়।তবে আয়নাঘর নিয়ে শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তির দাবি করে ইন্টারনেটে প্রচারিত ওই ভিডিওটি আসল নয় বলে জানিয়েছে তথ্যের সত্যতা যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রায় ৫ বছরের পুরোনো ভিন্ন একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ব্যবহার করে ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় সেটিতে ভুয়া অডিও যোগ করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এ নিয়ে অনুসন্ধানে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের বাংলা সংস্করণের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের শেখ হাসিনার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। ওই বছরের ৬ আগস্ট প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে থাকা শেখ হাসিনার পোশাক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে প্রচারিত ভিডিওতেও শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেওয়া নারী বিবিসি বাংলার মানসী বড়ুয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্য ওই সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া হয়েছে।

যদিও মূল সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ছাড়াও গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। এছাড়া ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনার অঙ্গভঙ্গিতেও কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়, যেটি মূল সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে পরিলক্ষিত হয়নি।পরবর্তীতে ‘আয়নাঘর নিয়ে শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি’ দাবি করে প্রচারিত ভিডিওটির সম্ভাব্য মূল ভিডিও নিয়ে অনুসন্ধান করলে আরটিনিউজ২৪ বিডি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটি পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটির বর্ণনা অংশ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিও কনটেন্টটি পরিবর্তিত বা কৃত্রিম এবং এর শব্দ বা ভিজ্যুয়াল উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পাদিত বা ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে বলে লেবেল করা হয়েছে। এছাড়া চ্যানেলটির অধীনে থাকা ফেসবুক পেজেও আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। যদিও সেখানে এমন কোনো লেবেল বা সতর্কতা দেয়া হয়নি বরং, আসল দাবিতেই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

সুতরাং, শেখ হাসিনার প্রায় ৫ বছরের পুরোনো সাক্ষাৎকারের ভিডিওর দৃশ্যে ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় ভুয়া অডিও যুক্ত করে ‘আয়নাঘর নিয়ে শেখ হাসিনার স্বীকারোক্তি’ দাবি করে ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।উল্লেখ্য, বাস্তবসম্মত দেখতে কিন্তু নকল বা কিছুটা পরিবর্তিত কন্টেন্টকে ডিপফেক বলা হয়। যা মূলত ভিডিও বা অডিওর উপাদান সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন ব্যক্তির মুখের অবয়ব বা ভয়েসকে অন্য কারও সঙ্গে বা নিজেরই ভুয়া ভিন্ন ঘটনার ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এছাড়া এই প্রযুক্তির সহায়তায় একজন ব্যক্তির এমন কিছু ভিডিও বা অডিও কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব যা তিনি নিজে বলেননি বা করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *